প্রতিবছর প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে মারা যায়। প্রতিবছর প্রায় ২ কোটি মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বলা হয়ে থাকে প্রতি ১০০ জন মানুষ যারা সুইসাইড করার চিন্তা করে তাদের মধ্যে ১০ জন্য চেষ্টা করে এবং ১ জন মারা যায়। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ সুইসাইড করে। প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে প্রতিবছর একজন আত্মহত্যা করে মারা যায়। আগের গবেষণাগুলিতে দেখা গেছে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। বর্তমানের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে আত্মহত্যার হার ২৫-৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১৫-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। পুরুষদের মৃত্যুর অষ্টম প্রধান কারণ আত্মহত্যা। নারীদের মৃত্যুর ১৯তম প্রধান কারণ আত্মহত্যা। সুইসাইড এর হার পুরুষদের মধ্যে বেশি। সুইসাইড এর পুরুষ নারী রেশিও প্রায় ৩:১, অর্থাৎ প্রতি চার জন আত্মহত্যাকারীর ৩ জন পুরুষ এবং ১ জন নারী। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই রেশিও প্রায় সমান ১.৩:১; অর্থাৎ পুরুষ এবং নারীরা সমান হারে আত্মহত্যা করে। নারীরা পুরুষের চেয়ে ৩ গুন বেশি হারে আত্মহত্যার চেষ্টা করে, কিন্তু সফল আত্মহত্যার পরিমাণ পুরুষে বেশি।
ভৌগলিক দিক থেকে চিন্তা করলে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করে উত্তর ইউরোপের দেশ এস্তনিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং লাটভিয়ার অধিবাসীরা। সেকুলার এবং অ্যাথিস্ট দেশগুলিতে আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। সবচেয়ে আত্মহত্যার হার কম কুয়েতে। ধর্মভিত্তিক চিন্তা করলে অ্যাথিস্টদের মধ্যে আত্মহত্যার হার ক্যাথলিক এবং মুসলিমদের চেয়ে বেশি। ম্যারাইটাল স্ট্যাটাস অনুযায়ী চিন্তা করলে অবিবাহিত ছেলেদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। বিবাহিত মেয়েরা অবিবাহিত মেয়েদের তুলনায় বেশি হারে আত্মহত্যা করে। যারা ডিভোর্সড অথবা যাদের স্বামী বা স্ত্রী মারা গেছেন তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। সন্তানহীন দম্পত্তিদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। শহরে বাসকারীদের মধ্যে আত্মহত্যার পরিমাণ গ্রামে বসবাসকারীদের তুলনায় বেশি। শিক্ষাগত যোগ্যতা যাদের কম তাদের মধ্যে প্রবণতা বেশি। অর্থনৈতিক দিক থেকে তুলনা করলে বেকারদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। দরিদ্র কিংবা যারা বস্তিতে থাকে তারা বেশি হারে আত্মহত্যা করে। অর্থনৈতিক মন্দাবস্থায় আত্মহত্যার হার বেড়ে যায়। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে আত্মহত্যার আনুপাতিক হার উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে বেশি। পেশাজীবীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি ডাক্তারদের মধ্যে, এরপরে রয়েছেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং খেলোয়াড়রা। চাঁদের অবস্থানের সাথে আত্মহত্যার সম্পর্ক রয়েছে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে আমাদের সারকেইডিয়ান রিদমের পরিবর্তন হয়। সবচেয়ে বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে বসন্ত কালে। সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে বুধবারে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা সংঘটিত হয়। এরপরে সবচেয়ে বেশি হয় সোমবার এবং শনিবারে। কারও বংশে আত্মহত্যার ইতিহাস থাকলে আত্মহত্যা সংঘটনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন বিখ্যাত পরিবার গুলির মধ্যে হেমিংওয়ে কিংবা কার্ল মার্ক্স পরিবারে প্রতি প্রজন্মে আত্মহত্যা হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে ৮০-৯০ ভাগ আত্মহত্যাকারী আত্মহত্যা সংঘটনের সময় কোন না কোন মানসিক সমস্যা বা রোগে ভুগছিলেন। মানসিক রোগ গুলির সবচেয়ে কমন হচ্ছে
-বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেসান
-ব্যক্তিত্ত্বের সমস্যা
-অ্যালকোহল আসক্তি
-অন্যান্য নেশায় আসক্তি
-সিজোফ্রেনিয়া
-তীব্র মানসিক আঘাত বা ট্রমা
-আগে থেকে নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা যেমন হাত-পা কাটাকাটি করা
আত্মহত্যার কতগুলি ট্রিগার ফ্যাক্টর রয়েছে। যেমন
-তীব্র অপমান
-রিলেসানশিপ ভেঙ্গে যাওয়া
-সঙ্গীর মৃত্যু
-চাকুরী চলে যাওয়া
-পরীক্ষায় খারাপ করা
-সঙ্গীর সাথে ঝগড়া করা ইত্যাদি
মনে রাখতে হবে কোন একটি নির্দিষ্ট কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে না। যে ঝুঁকিগুলি এখন পর্যন্ত গবেষণায় চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে যত বেশি সংখ্যায় ঝুঁকিগুলি থাকবে আত্মহত্যার ঝুঁকি তত বেশি। আরও মনে রাখতে হবে কেউ হঠাৎ করে আত্মহত্যা করে না। মানুষের শৈশবের প্রতিকুল বা বিমুখ অভিজ্ঞতা, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব যেমন হঠাৎ করে রেগে যাওয়া বা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি না জানা, কোপিং করার ক্ষমতা না থাকা, মানসিক রোগ থাকা এই পাঁচটি ফ্যাক্টরের সাথে যখন উপরের ঝুঁকিগুলি এবং ট্রিগার ফ্যাক্টর যুক্ত হয় তখন মানুষ আত্মহত্যা করে।