সাবকন্সাস শব্দটি ফ্রান্সে পিয়ার জ্যানেট নামে একজন মনোবিজ্ঞানী জনপ্রিয় করে তুলেন। তিনি সাবকন্সাস বলতে আমাদের চেতনার বাইরে মনের যে অংশ রয়েছে তা বোঝাতে এটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে সিগ্মুদ ফ্রয়েড এই শব্দটিকে তার মনের বিভিন্ন অংশের মডেল বর্ণনা করতে ব্যবহার করেন।
ফ্রয়েডের মতে মানুষের মনের দুটি অংশ রয়েছে। প্রথমটি কন্সাস বা চেতন, দ্বিতীয়টি সাবকন্সাস বা অবচেতন। অবচেতন মনের আবার দুটি অংশ রয়েছে; প্রি-কন্সাস এবং আনকন্সাস বা অচেতন।
কন্সাস বা চেতন মনের মধ্যে রয়েছে আমাদের চিন্তা, যেটা আমরা নিজেরাই পর্যবেক্ষণ করতে পারি। আমাদের আবেগ, আমাদের অনুভুতি যেগুলো চোখ, কান, নাক, জিহবা বা ত্বকের মাধ্যমে আমরা অনুভব করি, আমাদের প্রেরণা বা মোটিভেসান, আমাদের বিশ্বাস, আমাদের স্মৃতি,আমাদের স্বপ্ন। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন চিন্তা, বিশ্বাস, আবেগ, প্রেরণা, স্মৃতি, ঘুমের মধ্যে বা বাইরে দেখা স্বপ্ন সবগুলোই আমরা নিজেরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি। তাই মনের এই অংশকে বলা হয় কন্সাস বা চেতন মন।
সাবকন্সাস মনের প্রথম অংশ হচ্ছে প্রি-কন্সাস। আমরা মনের এই অংশ নিয়ে সাধারণ ভাবে সচেতন না; কিন্তু আমরা যদি মনোযোগ দেই তাহলে মনের এই অংশ সম্পর্কে সচেতন হতে পারি। যেমন একজন কিভাবে পোশাক পরে বা সাইকেল চালায় তা সে নিজেও অধিকাংশ সময় খেয়াল করে না; কিন্তু একটু গভীর মনোযোগ দিলে সে দেখবে কিভাবে হাতার মধ্যে হাত ঢুকাচ্ছে , বোতাম লাগাচ্ছে বা পেডাল মারছে।
সাবকন্সাস মনের দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে আনকন্সাস বা অচেতন মন। ফ্রয়েডের মতে অচেতন মনে আমাদের সকল চিন্তা, অনুভূতি, আবেগ, ব্যবহারের পিছনে যে গভীর কারণ থাকে তা থাকে। তিনি একে ড্রাইভ বা ইন্সটিঙ্কট বলেছেন। এই ড্রাইভ মানুসের চেতনার বাইরে। ড্রাইভ আবার দুইরকমের। প্লেজার ড্রাইভ, যেটিকে তিনি বলেছেন সবসময় আনন্দ (খাবার, ঘুম, সেক্স থেকে) লাভের চেষ্টা এবং কষ্ট থেকে দূরে থাকার ড্রাইভ বা ইচ্ছা। দ্বিতীয় ড্রাইভটি হচ্ছে অ্যাগ্রেসান ড্রাইভ বা রাগ, ক্ষমতা, প্রতিযোগিতা করার ড্রাইভ। ফ্রয়েডের মতে অচেতন মনের এই প্লেজার আর অ্যাগ্রেসান ড্রাইভ সব মানুষকে পরিচালিত করছে। ফ্রয়েড পরবর্তীতে আরেকটি ড্রাইভ মানুষের চালিকাশক্তি বলে উল্লেখ করেন, এটি হল ধ্বংস হওয়ার প্রবণতা। আত্মহত্যা, মাদক নিজেকে ধ্বংস করার এই ঘটনাগুলি এই ড্রাইভের কাজ।
অচেতন মনের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। এটা সবসময় আনন্দ এবং অ্যাগ্রেসান এর পেছনে ছুটে। বিপরীতধর্মী চিন্তা এর মধ্যে থাকতে পারে। এটা যৌক্তিক না। মনের এই অংশের সময় বা স্থানের কোন কনসেপ্ট নেই। সবচেয়ে বড় কথা এই অংশের কোন কিছুই সাধারনভাবে আমাদের চেতনা বা পর্যবেক্ষণে আসতে পারে না।