01894935990 & 01894935991

দুই ধরনের আশাবাদী মানুষ আছে। প্রথমত কিছু মানুষ স্বভাবগতভাবে আশাবাদী।  তারা সবসময় কোন কাজের খারাপ ফলাফলের চেয়ে ভাল ফলাফল আশা করে, এমনকি কঠিন মুহূর্তেও। দ্বিতীয়ত কিছু মানুষ যেকোনো ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্য আশাবাদীদের চিন্তার রীতি ব্যবহার করে।  ইংরেজিতে প্রথম ধরনের মানুষদের বলা হয় dispositional optimist, দ্বিতীয় ধরনকে বলা হয় optimism as an explanatory style।

আশাবাদী এবং নিরাশাবাদীদের চিন্তার মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে।  নিরাশাবাদীরা মনে করে যেকোনো ঘটনার ফল চিরস্থায়ী, এই ফলাফল তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে এবং ফলাফল বা ঘটনার উপর তাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এছাড়া নিরাশাবাদীদের চিন্তায় কিছু ভুল থাকে; যেমন একটি ঘটনা থেকে সিদ্ধান্তে পৌঁছান (generalization), নিজেকে দায়ী করার প্রবণতা (self-blame), সবকিছুকে ভাল বা মন্দ করে দেখা এর মাঝখানে কিছু নেই (all or none thinking), অন্যর সাথে তুলনা করে নিজেকে সুখী বা অসুখী মনে করা (comparison), আবেগ দিয়ে ঘটনার বিচার করা (emotional reasoning, যেমন আমি অনুভব করি লোকে আমাকে খারাপ মনে করে), ঘটনার গুরুত্ব ঘটনা অনুযায়ী বিচার না করে ছোট বা বড় করে ফেলা (magnification /minimization) ইত্যাদি।

অন্যদিকে আশাবাদীরা যখন ভাল কোন ঘটনা বা ফলাফলের মুখোমুখি হয় তখন মনে করে যে এর প্রভাব স্থায়ী, প্রভাব সর্বব্যাপী এবং এটি তাদের নিজস্ব প্রচেষ্টার ফল।  খারাপ কোন ঘটনা জীবনে ঘটলে মনে করে এর প্রভাব ক্ষণস্থায়ী, সবক্ষেত্রে নয় এবং এটি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।

কোন সমস্যা সমাধানের জন্য নিরাশাবাদীরা আবেগ-নির্ভর সমাধান পদ্ধতি ব্যবহার করে।  যেমন পরীক্ষায় খারাপ করার পরে পড়াশুনা না করে মুভি দেখা, মুভি দেখলে মন ভাল থাকে এতে খারাপ রেজাল্টের কারণে যে দুঃখবোধ তৈরি হয়েছিল তা দূর হবে।  অন্যদিকে আশাবাদীরা প্রবলেম-ফোকাস সমাধান পদ্ধতি ব্যবহার করে।  তারা চিন্তা করবে মন খারাপ লাগার কারণ হচ্ছে রেজাল্ট খারাপ, রেজাল্ট ভাল করলে মন ভাল হবে।  তারা মুভি দেখে মন ভাল করার চেয়ে রেজাল্ট ভাল করে মন ভাল করার চেষ্টা করবে বেশি।

এছাড়া সমস্যা সমাধানের জন্য আশাবাদীরা নিজের প্রচেষ্টাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। নিরাশাবাদীরা মনে করে সমাধান হয়ত পুরোপুরি তাদের হাতে নেই; পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, সমাজ, ভাগ্য এইসবের হাতে।

মানুষ কি চাইলেই আশাবাদী হতে পারে? বিজ্ঞান বলছে কেউ আশাবাদী হবে না নিরাশাবাদী হবে তা নির্ভর করে তার জেনেটিকাল গঠন ও শৈশবের অভিজ্ঞতার উপর।  আমাদের জিন এবং অভিজ্ঞতা আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও চিন্তার ধরন নির্ধারণ করে দেয়। শৈশবের শারীরিক বা মানসিক চাপ আপনাকে পরিণত বয়সে একজন নিরাশাবাদী করে তুলতে পারে। কিন্তু ধরেন আপনি পেয়েছেন আশাবাদী বৈশিষ্টের জিন তাহলে হয়ত খারাপ অভিজ্ঞতাও আপনাকে নিরাশ করতে পারবে না।

বিজ্ঞান এটাও বলছে মানুষ চাইলেই আশাবাদী মানুষের মত চিন্তা করতে পারে। আশাবাদী চিন্তা আপনার বেঁচে থাকাকে আনন্দদায়ক ও সহজ করবে, জীবনের অনিশ্চয়তাকে সহজে গ্রহণ করতে পারবেন।  আশাবাদী হতে হলে উপরে যেভাবে বলা আছে সেরকম আশাবাদীদের মত চিন্তা করুন এবং সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি ব্যবহার করুন।