01894935990 & 01894935991

স্মৃতি বলতে মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ করার এবং প্রয়োজন অনুসারে তা পুনরায় মনে বা স্মরণ করার ক্ষমতাকে বুঝান হয়।  তাহলে স্মৃতিশক্তি মূলত দুটি ক্ষমতার সমন্বিত শক্তি; একটি হচ্ছে তথ্য ধারণ করার ক্ষমতা, অন্যটি হচ্ছে দরকার পড়লে পুনরায় মনে করার ক্ষমতা।  ধরেন কেউ একজনকে একটি বাড়ির ঠিকানা দিয়ে তাকে সেখানে যেতে বলল।  তাহলে তাকে প্রথমে মনে রাখতে হবে বাসার ঠিকানাটি, তারপরে যখন ঐ বাড়ির সামনে দাঁড়াবে তখন প্রথমে মনে রাখা ঠিকানাটি মন থেকে বের করে আনতে হবে এবং নেমপ্লেটে লেখা ঠিকানার সাথে মিলিয়ে নিতে হবে।  প্রথমে মনে রাখা এবং পরে মন থেকে বের করে আনা এই দুইয়ের সমন্বয় হচ্ছে স্মৃতি।

জ্ঞান অর্জন বা কোন কিছু শেখার সাথে স্মৃতিশক্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।  যেমন ধরা যাক কমলালেবুকে কমলালেবু বলা হয় কারণ এর একটি নির্দিষ্ট আকৃতি রয়েছে যেটা চোখ দিয়ে বা হাত দিয়ে ধরে বুঝতে পারা যায়। এর রঙ চোখ দিয়ে দেখা যায়।  এর স্বাদ জিহ্বা দিয়ে নেয়া যায়।  এর গন্ধ নাক দিয়ে নেয়া যায়। হাত দিয়ে ধরে এর গঠন বোঝা যায়। আবার কমলালেবু হাত থেকে পরে গেলে ভোতা একধরনের শব্দ হবে।  এভাবে চোখ, কান, নাক, জিহ্বা বা ত্বক দিয়ে কোনো বস্তুকে চিনতে পারা যায় এবং অন্য বস্তুর সাথে আলাদা করা যায়। কোন বস্তুকে চিনতে এবং অন্য বস্তুর থেকে আলাদা করতে হলে কমপক্ষে একটি বা দুইটি বস্তু সম্পর্কেই স্মৃতি থাকতে হবে।  এই স্মৃতিগুলি আসে আমরা আমাদের ইন্দ্রিয় দিয়ে যা ধারণ করি তা থেকে।

মানুষ যা কিছুই শিখে তা স্মৃতিতে ধারণ করতে হয়। হাঁটা, কথা বলা, সামাজিক ব্যবহার, যেকোনো বস্তুর পরিচয় বা কাজ, পড়াশুনা সংক্রান্ত জ্ঞান, এককথায় মানুষ জীবনে যা কিছু শিখে সবকিছুই স্মৃতিতে থাকতে হয়।  যদি কোন কারণে স্মৃতি নষ্ট বা ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে সে সংক্রান্ত কাজগুলি করা সম্ভিব নয়।  যদি মস্তিষ্কের যে অংশে মানুষের মুখের স্মৃতি জমা থাকে সেই অংশের কোন রোগ হয় তাহলে মানুষকে চেনা সম্ভব নয়; পূর্বপরিচিত সবাইকে অপরিচিত মনে হবে। আবার মস্তিষ্কের যে অংশ জুতার ফিতে বাঁধা, সাইকেল চালান বা গাড়ি চালানোর স্মৃতি ধারণ করে তাতে কোন সমস্যা হলে সেই কাজগুলি করা সম্ভব না।  আবার বিয়ে বাড়িতে খেলার মাঠে হৈ-হুল্লোড় করতে হয়, কবরস্থানে ক্লাসরুমে চুপ থাকতে হয়, বন্ধুদের দেখলে জড়িয়ে ধরতে হয়, বসকে দেখলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতে হয়; স্মৃতি এইগুলি ধারণ করে এবং সামাজিক পরিস্থিতিতে আমরা সেই অনুযায়ী আচরণ করি অর্থাৎ কোন পরিস্থিতে আচরণ কেমন হবে তা আসে স্মৃতি থেকে।

জ্ঞান অর্জন ছাড়া স্মৃতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে মানুষের আত্ম-পরিচয় ধারণ করা। মানুষের অতীত অভিজ্ঞতা, বর্তমান চেতনা এবং ভবিষ্যতের আশার সাথে সমন্বয় করে স্মৃতি একটি সমন্বিত আমিত্বের ধারণা তৈরি করে। একজন মানুষ তার স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ববোধ অনুভব করে কারণ তার প্রতি অতীতের ভালবাসার স্মৃতি তার মস্তিস্কে থাকে। আবার একজন মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করছেন কারণ অতীতে তিনি ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন। যদি স্মৃতির মাধ্যমে অতীতের সাথে বর্তমান বা ভবিষ্যতের যোগ না থাকত তাহলে বর্তমানের অনেক কাজই মানুষ করত না।

কোন পরিস্থিতিতে কি আবেগ আসবে তা নির্ধারণ করে আমাদের সেই পরিস্থিতি সংক্রান্ত স্মৃতির উপরে।  বন্ধুকে দেখলে মনে খুশির আবেগ আসে কারণ বন্ধুর সাথে আগের অনেক আনন্দের স্মৃতি আছে।  তেলাপোকা, মাকড়সা, টিকটিকি দেখলে ভয়ের আবেগ আসে কারণ হয়ত এই প্রানিগুলির সাথে ভয়ের কোন অভিজ্ঞতা মস্তিস্ক ধারণ করে রেখেছে।

মূর্ত বা বিমূর্ত কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হলে স্মৃতির দরকার।  যেমন স্মৃতি মানুষকে ঘোড়া এবং পাখি চিনতে সাহায্য করে; এখন ঘোড়া এবং পাখিকে এক করে যদি বিমূর্তভাবে মানুষ উড়ন্ত ঘোড়ার কথা চিন্তা করে সেক্ষেত্রে প্রথমেই যদি ঘোড়া এবং পাখির স্মৃতি না থাকত তাহলে তা করা সম্ভব হতনা।  এভাবে মানুষ ভবিষ্যতে ঘটবে এরকম যা কিছু চিন্তা করে, সমস্যা সমধানের জন্য যা কিছু চিন্তা করে, মানুষের কল্পনা সবকিছু শুরু করতে মৌলিক কিছু স্মৃতি দরকার।

তাহলে দেখা যাচ্ছে মানুষের জন্য তার স্মৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ।  স্মৃতি তার আত্মপরিচয় ধরে রাখে, অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করে।  স্মৃতি জ্ঞান অর্জন বা কোন কিছু শিখতে সাহায্য করে। স্মৃতি আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।  স্মৃতি মূর্ত এবং বিমূর্ত চিন্তা করতে, সমস্যা সমাধানের পথ বের করতে, কল্পনা করতে সাহায্য করে।  মানুষের আবেগের প্রকাশ নির্ভর করে স্মৃতির উপর।

সারসংক্ষেপ

১. স্মৃতিশক্তি মূলত দুটি ক্ষমতার সমন্বিত শক্তি; একটি হচ্ছে তথ্য ধারণ করার ক্ষমতা, অন্যটি হচ্ছে দরকার পড়লে পুনরায় তথ্যটি মনে করার ক্ষমতা।
২. স্মৃতি মানুষকে মনে রাখতে, জ্ঞান অর্জনে, স্কিল অর্জনে, আত্মপরিচয় ধারণে, আবেগ প্রকাশে, চিন্তা করতে সাহায্য করে।